Sunday, November 6, 2022

লাস্য - ভেগাস

নবমী নিশি তুমি হইয়ো না ভোর!! 



পাপবিদ্ধ নগরী, লাস্যময়ী ভেগাস - ঠিক যেন ব্ল্যাক-হোল ।লোকে বলে, এখানে যা ঘটে, তা চিরকাল এখানেই থেকে যায়,  হকিংস রেডিয়েশনের সব সম্ভাবনা শূন্য।  এ শহর চির যৌবনা। যৌবন তো আসলে কোনো বয়স না, নেহাৎই স্টেট অফ মাইন্ড। 

বৃষ্টিচ্ছায় মরুভূমির উষ্ণ দিন ঢলে পড়ে ভেগাস নগরীর ঠিক বাইরে, ঘিরে থাকা পাহাড়ের কোলে। অস্তমিত সেই রশ্মি, যেন মধুভান্ডের তরল সোনার মতো। গড়িয়ে পরে রুক্ষ পাথুরে গায়ে। লাল হয়ে উঠে সন্ধ্যার আকাশ, লাল আভা ক্রমে  কালচে হয়ে রাত নামায়। তখন সে মরুদ্যানের এদিকে - ওদিকে ফুটে উঠেছে আলোর ফুলকি। তপ্তভূমি ভেগাসে নামলো সবে কলির সন্ধ্যে। উছলে পরে লেসার -নিয়ন, অহেতুকী করুনাধারা যেন ।লাস্যের রাজধানী তে আজ সপ্তাহান্তের ভীড়। উচ্চগ্রামের সঙ্গীত মূর্ছনা ঘিরে রাখে এ শহর, বলয়ের মত। সেই সুরে ও তালে কাঁপছে আকাশ, কাঁপছে বাতাস - য্যুথবদ্ধ মানুষ, কাঁপছে সবাই এক সমষ্টিগত ইন্দ্রিয়লোলুপ ঝংকারে। সমষ্টিতেই সুখ; এ সুখের জীবন, পদ্মপাতায় জলের ফোঁটা যেমন। মুহূর্তটাই সত্যি, বাকি সব মায়াসম, ভ্রান্তি। 

রাত্রি এখানে অধিক লাস্যময়। কুহকিনীর স্বল্পবসন নেশাতুর দু- চোখে ফিশনেট হয়ে ঝরে পরে। গভীর লাল আলো -অন্ধকারে, মদিরাক্লান্ত নয়নে যেন স্বর্গ নেমে আসে। প্রেমিকা রূপী অপ্সরা এ-কোল ও-কোল সে- কোল ; রাত বুঝি ভোর হয়ে আসে। ক্রমে বাতাস আরো ভারি হয় লোভের গন্ধে-গন্ধে। স্ট্রিপের হোটেল থেকে হোটেলের জানলায় জমে সহস্র গল্পের কোলাজ । মরুভূমির শুষ্ক বাতাসে ফোঁটা ফোঁটা আর্দ্রতা - মদিরাহত সব নোনতা জলের। লোভের পরে লোভ জমেছে, আঁধার করে আসে - একেই কি তবে পাপ বলে? ক্লান্ত ক্যাসিনোর আড়ালে জেগে থাকে সরীসৃপ চোখ। এসির হাওয়ায় শীতল শরীর। শল্কশুষ্ক হাত ছিন্ন ভিন্ন করে মহার্ঘ অন্তর্বাস। রঙ্গীন জল ঢেলে তাতে আগুন জ্বলে ওঠে। এক রাত্রের ফুলশয্যা, যেন আরব্য রাজনীর গল্প - রূপকথার সিন্ডেরেলার মতো, সকাল হলেই সব হাওয়ায় মিলিয়ে যায় - থাকেনা স্মৃতি টুকুও। 

ভেগাস শহরের সীমানার ঠিক বাইরেই,  দিনের আলোয় উদ্ভাসিত রুক্ষ লাল ভূমিরূপ - দিন পেরোলেই অন্ধকারে তারার আলোয় ভরা আদিমতা। অদ্ভুত এক  বৈপরীত্যের সমাপতন। যে শহরে সময় ছুটছে উত্তর- আধুনিক হবে বলে, তার সীমার ঠিক বাইরে সময় যেন থমকে, ইটার্নিটির মধ্যে। সীমায় বদ্ধ মানুষ,  রেসের ঘোড়ার মতন - অলি-গলি পাকস্থলী তার একমাত্র জীবন। তবু ওর- ই মধ্যে কেউ কখনো দেখে ফেলেছিল ওই অতীন্দ্রিয় ব্যাকড্রপ।কোনোদিন চোখ ফেরাতে পারেনি আর। 

সে দেখেই চলে, নিকষ অন্ধকার আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে অন্ধকার পাহাড়, যেন চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে। অতন্দ্র প্রহরীর মতো সেই পাহাড়, উর্দ্ধনয়না; দূর আকাশে ফিসফিসিয়ে গল্প করে ছায়াপথের সাথে। রুক্ষ পাথরের প্রহরী পাহাড় - উড়ে আসা বুদ্বুদের মতো সব মুহূর্ত জমে জমে মহাকাল সম - যেন এক ইনফাইনাইট পোটেনশিয়াল ওয়াল। 






* ছবি: হোটেলের জানলা থেকে