Sunday, July 6, 2014

অর্কুট-আয়ন

আর দাদা কি বলব আর , আজকাল জীবন তাই ফেইসবুক হয়ে গেছে। মানে জীবনের face টাই  internet দিয়ে booked আর কি। আমার অফিসঘর টা নেহাত ই বদ্ধ , একটাও জানলা নেই , দরজা দিয়েও খালি বারান্দা দেখা যায় মাত্র। তবে কুছ পরোয়া নেহি , মুক্ত বাতায়ন তো সঙ্গে সারাক্ষণ , কিসে খুলবো ?, ফোন এ নাকি ল্যাপটপ এ ? নাকি ডেস্কটপ ই সই ! তো এ হেন মুক্ত গবাক্ষ থাকতে কি দরকার আর জানলার ? বাইরে বৃষ্টি নামল তো দু মিনিটের মধ্যে জেনে গেলুম , দশ জন already স্টেটাস লিখে দিয়েছে , বাইরে গিয়ে মিলিয়ে নেওয়ার অপেক্ষা খালি।  হুম , সত্যি বৃষ্টি ! সারা দিন টাই তো  খালি ব্রেকিং নিউস এর ধুম।  অমুকএর ঘুম পেয়েছে ক্লাস করতে গিয়ে , তো তমুক পাড়ার মোড়ে চা খাচ্ছে।মানে ইয়ে আমিও লিখি , আর অপেক্ষা করি কখন কে তাতে লাইক দেবে বা দুটো সহমর্মী কথা লিখবে !তবে কিনা আমি লিখি বলেই সকলের টা পড়তে হবে ? ব্যাপারটা নেহাত ই স্প্যামিং। নিউস ফিড জ্যাম করা খালি । তার মধ্যে আবার অতি intellectual এর দল , হয় সারাক্ষণ তত্ত্ব কথা জ্ঞান দিচ্ছে , শো অফ আর ঢাক পেটানো।  আমি কত্ত বুঝি ! আর কবি দের তো পোয়া বারো , দু লাইন লিখলেই গুষ্টি সুদ্ধু সকল কে ট্যাগ করে জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে , পড়বি  না মানে ? তোর বাপ পড়বে !
তো যাই হোক, যা বলছিলাম তা এসব গালমন্দ না , বলতে চেয়েছিলাম যে, এই ইন্টারনেট কিভাবে আমাগো বঙ্গ জীবনের অঙ্গ হলো। তখন আমাদের নেহাৎ ই তরুণ প্রাণ। ওই HS এর শেষের দিকে , বা তার ও আগে।  তখনো সেভাবে ঘরে ঘরে computer আসেনি , কিন্তু পাড়ার মোড়ে এক খানি সাইবার কাফে খুলেছে।  তাতেই গিয়ে জীবনের প্রথম email id খুলে এসেছিলাম rediffmail এ। তারপর ঢুকলাম কলেজ এ , সেই ২০০৪ সাল। বাড়ি তে একটা কম্পিউটার সহযোগে ব্রডব্যান্ড হাজির হলো কিছু দিন পর। ব্যাস , পড়াশুনো যদি বা হওয়ার ছিল , আরোই ঘুচলো। প্রোফাইল হলো অর্কুট এ।  দেখে শুনে একটি প্রোফাইল পিকচার। ব্যাস , কিছু দিনেই বন্ধু সংখ্যা ২৫০ ! সেই প্রাইমারি স্কুল এর হারিয়ে যাওয়া বন্ধু থেকে মামার বাড়ি র পাড়ার ছেলে সবাই হাজির। তারমধ্যে বসন্তএর কোকিল ও ডাকতে শুরু করলো , কত জন এর যে কত পাতানো বন্ধু হলো , কত লোক propose  করলো অর্কুট এ, আবার কত লোকের হার্ট break হলো হিসাব নেই। সেই থেকে চ্যাট করার অভ্যেস শুরু , এখনো চলছে , খালি জায়গা  বদলে বদলে গেছে , কিম্বা পাত্র -পাত্রী।  এই চ্যাট করে করেই আমাদের আর কোনো দিন টাইপ  শিখতে যেতে হয়নি , ঝড়ের গতিতে লিখতে পারি। কাজ এর ফাঁকে গম্ভীর মুখে বসে অট্টহাস্য টাইপ করি। মানে , সেই যে উত্তরায়ণ এর মত অর্কুট-আয়ন শুরু হয়েছিল , তা বদলে গিয়ে facebook-আয়ন হলেও মূল ব্যাপারটা রয়েই গেছে।  যাই হোক ওই ফেইসবুক এরই দৌলতে সব্বাই জেনে গেছে যে অর্কুট বন্ধ হতে চলেছে। তাই সবাই একবার করে নিজের অর্কুট প্রোফাইল এ গিয়ে দেখে নিচ্ছে। অর্কুট এ প্রেম করে বিয়ে টিয়ে করে ফেলেছে কত couple , কত জন অর্কুটে committed থেকে facebook এ সিঙ্গেল হয়ে গেল। মানে না হেজিয়ে বলার বিষয় এটাই যে , সব্বার হেব্বি পুরনো কথা মনে পড়ছে , কে কবে কাকে নিয়ে প্রথম একাউন্ট খুলেছিল , ইত্যাদি ইত্যাদি। মেলা ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ না করে সহজ সত্যি বস , অর্কুট কবেই জীবন থেকে চলে গেছে সবার , কেউ খুলেও দেখত না , তখনকার প্রেম ও কারুর টিকে নেই বিশেষ , যদি না বিয়ে হয়ে গিয়ে থাকে। তাহলে এত দুঃখু ভরা স্টেটাস দিয়ে আর ফেইসবুক টাকে ভরাবেন না দাদা please , অনেক হইসে। চেঞ্জ ইস the অনলি কনস্ট্যান্ট অফ  লাইফ ! বুঝলেন ? 

মোক্ষয়ং

শ্রাবণী পূর্নিমা। বর্ষণ সিক্ত হিমালয় কেঁপে কেঁপে উঠছে জোলো বাতাসে। মেঘ -গম্ভীর আকাশের বুক চিড়ে  মাঝে মধ্যে চাঁদের হাসি খেলে যাচ্ছে বিদ্যুতের মত , আর গৈরিক বসন হিমালয় হয়ে উঠছে ধ্যানগম্ভীর। উত্তর দিক থেকে ভেসে আসছে আর্দ্র বাতাস কোন এক নাম না জানা ফুল এর গন্ধ নিয়ে , পাহাড় এর ঐদিকে বোধ করি খুব  বৃষ্টি , গেছে ক্ষানিক আগে। দূরের বৌদ্ধ গুহা থেকে ধ্বনিত হচ্ছে বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি ! আবার এক রাশ মেঘ এসে কালো করে দিচ্ছে সব দিক, ওমনি বিরহী যক্ষের দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে উঠছে দেবভূমি।
 আজ স্বপ্নের মত মায়াবী হয়ে আছে হিমালয়। ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ আর পূর্নিমার চাঁদ আকাশে। রাত্রির  ঠিক মধ্যভাগ এখন, ঠান্ডায় জলে বাতাসে অন্ধকার জড়াজড়ি করে ঘুমোচ্ছে যেন, কোথাও কেউ নেই আজ। রাত পাখিটাও  গান গাইতে ভুলে গেছে যেন কিসের অপেক্ষায়।
রাত দ্বিপ্রহর। বেজে উঠলো সেই বাঁশি।প্রতি শ্রাবনী পূর্নিমা র মত আজ ও সেই বৃদ্ধ সাধক যেন প্রাণ ঢেলে দিয়েছেন বাঁশি তে, আর একটু একটু করে সরস্বতী রাগের আলাপ বিস্তার হচ্ছে। আকাশ- বাতাস- পাহাড় ধ্যান ভেঙ্গে  ডুবে যাচ্ছে সেই সরস্বতী র সুর মূর্ছনায়। ক্রমশ সেই সুর যেন সপ্তলোক ভেদ করে গিয়ে পৌঁছলো দেবীর কানে ,অকাল বোধন ঘটলো আবার। জেগে উঠলেন দেবী,অমোঘ সেই আহ্বান।'ইহাগচ্ছ ,ইহতিষ্ঠ !' সুরের পথ বেয়ে ঝর্ণার মতো নেমে আসছেন দেবী।  পাহাড়ের প্রতিটি ভাঁজে,গাছের প্রতিটি পাতায় ধীরে ধীরে  তাঁর প্রকাশ ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছে।
আর সেই বাঁশি বাদক সাধকের অস্তিত্ত যেন নিমজ্জিত রাগিনী র সুরজালে ,নিমীলিত নয়ন, প্রশান্ত বদন,স্নিগ্ধ হাসি।চারিদিকে শুদ্ধতম সরস্বতী রাগের নিপুন স্বরবিস্তার। বহু বছরের চেষ্টায়,বহুদিনের সাধনায় আজ তিনি পূর্ণ,দেবী সরস্বতী তাই আজ ধরা দিয়েছেন, বিশুদ্ধ রাগিনীর সুদ্ধ স্বর আঘাত করেছে প্রতিটি তন্ত্রী তে তাঁর,তাই নেমে এসেছেন বাগদেবী আজ এই হিমালয়ে র কোনে।গাছের পাতায়,মাটির ঘাসে,তুষার শৃঙ্গে,চাঁদের আলোয়,পদ্ম বনে, শিশির কণিকায়।
বাঁশি বেজে চলেছে একমনে,দেবভূমি যেন এক ছন্দে কম্পমান। আর ,একটু একটু করে প্রকাশিত হচ্ছেন দেবী স্বশরীরে। "যা কুন্দেন্দু তুষারহারধবলা।.."। একটু একটু করে জমাট বাঁধছে জ্যোতি , স্থির চপলা সরস্বতী আবির্ভূত হচ্ছেন। নিরাকার থেকে সাকার রূপ ধারণ করছেন। সমগ্র হিমালয় নতমস্তকে আহ্বান জানাচ্ছে , সাধক এখন সিদ্ধ লাভের প্রাক্কালে। ইষ্ট দেবী অভির্ভুতা হয়েছেন তাঁর আহ্বানে।
বাঁশি শেষ হলো অবশেষে , রাত্রি শেষ হয়ে এসেছে , চাঁদ ঢলে পড়েছে পশ্চিম গগনে। জমাট বেঁধেছে মেঘ আবার ঈশান কোনে। দেবী বন্দিনী হলেন আজ,সাধকের তন্ত্রী তে। সাধক তাঁর বাঁশি সমর্পন করলেন দেবীর পদতলে।
সবাই দেখল পরদিন সকালে,সাধক দেহত্যাগ করেছেন পাহাড়ের গায়ে রাত্রির কোন এক প্রহরে।
 উন্মুক্ত হিমালয়ের কোলে বসে,নক্ষত্রের আলোকে জীবনের শ্রেষ্ঠ বাজনা বাজিয়েছিলেন তিনি সেই রাতে। পারি দিয়েছেন গন্ধর্বলোকে ,দেবী সরস্বতী র হাত ধরে।


Saturday, June 28, 2014

মেয়েবেলা


 আমাদের প্রজন্মের সকলেরই ছোট বেলা বোধ হয় খানিকটা একইরকম। আমরা বিকেলে মাঠ এ খেলতে যেতাম, সন্ধ্যেবেলা মা ডাকলে বাড়ি ফিরতাম ,দু চার ঘা হাতপাখা র বাড়ি কিম্বা একটা আধটা চড় চাপড় ও জুটত অন্ধকার হয়ে গেছে বলে, যদিও বুঝতে পারিনি যে সূর্য ডুবে গেছে তো আমি কি করব ! আমাদের তখনকার জীবন ছিল নেহাৎ ই ধীর, টিভি তে এত চ্যানেল ছিল না , ইন্টারনেট ছিল না , ছিল রোজ সন্ধ্যেবেলা কারেন্ট গেলে ছাদে গিয়ে মাদুর বিছিয়ে শুয়ে শুয়ে গল্প শোনা, আকাশের তারা চেনা। উপরি পাওনা বলতে রথ , রাসের মেলা, ঝুলন এইসব গোটাকতক গ্রাম্য বিনোদন। তখন আমাদের Facebook এ বন্ধু পাতাতে হত না , এ পাড়ার , ও পাড়ার সবাই এমনি বন্ধু হয়ে যেত , আর সেখানে খুব বেশি ভেদাভেদ ও ছিল না , আমার এরকম অনেক বন্ধু ছিল বিকালে খেলার সঙ্গী , যাদের মা বাড়ি বাড়ি কাজ করতেন। সারা বিকেল খেলে এসেই সন্ধ্যেবেলা পড়তে বসে ঢুলতাম খুব, ঘুম পেয়ে যেত তাড়াতাড়ি , অবশেষে রাত সাড়ে নটা বাজতেই খেয়ে দেয়ে ঘুম , টিভি তে বড়জোর খবর চলছে তখন।  কোনো কোনো দিন আবার সন্ধ্যেবেলা হঠাত করে মাথায় উকুন আবিষ্কার হত , ব্যাস , পড়াশুনো সব শিকেয় , সরু চিরুনি নিয়ে মা উকুন তাড়াতে উদ্যোগী হয়ে পড়ল , আর বলাই বাহুল্য যে ফ্রি তে দেদার বকুনি। তারপর পড়তে বসেও HW গুলো কোনো ক্রমে শেষ হলেই মনটা কীরম উরু উরু করত , পুজোসংখ্যা আনন্দমেলা তো দু হপ্তাতেই শেষ , তারপর লুকিয়ে লুকিয়ে হাত বাড়াতাম দেশ কিম্বা আনন্দবাজার পত্রিকার দিকে  , এ ছাড়া ছিল ফি সপ্তাহে লাইব্রেরি র বই , তারপরেও এদিক ওদিক থেকে বই র সম্ভার কম হত না , পড়ার বই খাতা র তলায় খুজলেই পাওয়া যেত তাদের। এ ছাড়া আমার নিজস্ব আর একটা টাইম পাস করার পন্থা ছিল বাংলা calender খুলে দিন গোনা ; অমুক দিন এই পুজো , তমুক দিন সেই পরব , দূর্গা পুজো আসতে আর ঠিক কত দিন বাকি, এ সব গুনতাম বসে। এই ছিল ছোট বেলা র দিনগুলো।

যাই হোক, গরম এর ছুটি র পর কিছুদিন বাদেই আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর এর অধিকর্তা কোন এক গোলদার ঘোষণা করে দিতেন বর্ষা এসে গেছে। আর তখন এরকম নিম্নচাপ হাইজ্যাক হত না , ফলে ভালই বৃষ্টি হত আর  চারিদিকে জল জমত। এরকমই ক্লান্ত একঘেয়ে দিনে নোটিশ আসত ক্লাসে , অমুক দিন রথযাত্রা উপলক্ষে ছুটি।কি আনন্দ।  আগের দিন থেকে সে কি উত্তেজনা, বাবা নিয়ে এসে দিতেন একটা রথ আর কাগজ এ মোড়া ঠাকুর , জগন্নাথ , বলরাম , সুভদ্রা। ময়দা জ্বাল দিয়ে আঠা তৈরি হত ,মা কাকীমা রা সাজিয়ে দিতেন রঙ্গীন কাগজ, ফুলের মালা দিয়ে।  তারপর বিকেল হতেই নকুলদানা কিম্বা পেয়ারা র টুকরো সাজিয়ে রথ নিয়ে বেরোনো হত। এ বাড়ি ও বাড়ি থেকে কাকীমা, জেঠিমা ,দিদা সবাই ঠাকুর নমস্কার করতেন , প্রনামী ও জুটত আটানা, এক টাকা।  দিন শেষে গুনে দেখা গেল পুরো ছ টাকা আয় হয়েছে। সেকী আনন্দ , আমার নিজের টাকা। আগামী বেশ কিছুদিন কালু কাকুর দোকানের রেগুলার কাস্টমার আমি ,হজমী অথবা scented পেন , কি মৌরী লজেন্স , অথবা জলছবি। জগন্নাথ এর কৃপায় দিন গুলো নেহাত বোরিং হলেও মন্দ ছিল না। এক সপ্তাহ বাদে আবার উল্টো রথ , তবে কিনা ওতে ছুটি পাওয়া যেত না ! ফলে আমার রথে চেপে জগন্নাথ ভাই বোন নিয়ে মাসির বাড়ি গিয়েই ক্ষান্ত হতেন , ফিরতি ride মিলত না আর।
তবে সমাজ এ সব কিছুর ই evolution হয় , পালা পার্বন এর ও। এখনকার বাচ্চারা অনেকে জানেই না , দ্যাখেই নি ,রথ কিভাবে টানে। যদিও আমাদের মত মফস্বল এ এখনো রথ এ মেলা বসে , লোকে পাপড় ভাজা খায়, গাছ কিনে আনে। তবে বাচ্চাদের এসব আর খুব একটা টানে না , হয়ত স্বাভাবিক, ওরা জন্মে থেকে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক দ্যাখে, কিম্বা ফেইসবুক এ farmville খেলে, এই সব ধীর গতির গ্রাম্য আনন্দ ওদের মন ভরবে কি ভাবে ? আসলে সমাজে পরিবর্তন একটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্থ। আমরাও গাজন এর মেলায় যায়নি কখনো। টুসু , ভাদু কিম্বা ইতুর ষষ্ঠী করিনি।  হয়ত আমাদের দিদা রাও তখন অভিযোগ করেছেন ,কষ্ট পেয়েছেন তাদের ছোটবেলা শেষ হয়ে যেতে দেখে। এভাবে হয়ত রথযাত্রা ও একদিন আর থাকবে না। আসলে পৃথিবী টা  ধীরে ধীরে গ্লোবাল গ্রাম হয়ে পড়ছে কিনা।

Wednesday, June 11, 2014

নয়ন এর দৃষ্টি হতে ঘুচবে কালো.....যেখানে পড়বে সেথায় দেখবে আলো !

যুগ যুগান্ত ধরে জমে থাকা বিষাক্ত দীর্ঘশ্বাস। সূচিভেদ্য অমানিশা। এ মহারাত্রি যেন কালরাত্রি, কিন্তু সে মোহময় কালরাত্রি র গরল আমায় স্পর্শ করে না। এই অন্ধকারেই তো বেহুলা ভেসেছিল কলাপাতার ভেলা নিয়ে। তাই এ রাত্রি লখিন্দর এর মৃত্যুর রাত নয় , তার নবজন্মের শুভক্ষণ। এ মহানিশা শুধুই অপেক্ষার। সুরঙ্গশেষ এর অপেক্ষা।
মনে হয় , এ রাত্রি আর শেষ হবে না এই জন্মে ; ক্লান্ত, বড় ক্লান্ত সে প্রতীক্ষা। মহাকাল চোখের পাতা ফেলেন, কেটে যায় অনন্ত কাল।অন্ধকার যেন আরো ঘনীভূত হয় , আরো কালো হয় সেই রাত।
ভগবান সৃষ্টি কল্পের কাজ শেষ করেছেন সবে,  ক্লান্ত , যোগনিদ্রায় বিশ্রাম রত । জাগিও না ওনাকে। অন্ধকারে অপেক্ষা কর, ধৈর্য ধর, জীবন এর সকল পুন্যক্ষণ এর পুর্বলগ্ন এমনি ক্লান্তিকর। এ তমসা ও তাই জ্যোতির্গর্ভা। ভগবান এখনো আলো সৃষ্টি করেননি , তাই বিশ্ব চরাচর এখনো চোখ মেলে তাকাতে শেখেনি ।পুণ্যতোয়া আলোর ধারা এখনো বাইরে আসেনি, অন্ধকারের মাতৃগর্ভে লালিত হচ্ছে।তাই চোখে দেখা যায় না, অনুভব করতে হয় ।চোখ বন্ধ করে অন্ধকার যখন আরো গভীর হয়, ধীরে ধীরে চেতনায় ধরা পরে তার অস্ত্বিত্ব ,আবেগে রোমকূপ শিহরিত হয়। তখন সৃষ্টি সুখের উল্লাস বইছে বিশ্বময়, কিন্তু ফল্গু ধারার মত অন্তরালে, তাই সব কিছু সমাহিত, অন্ধকার এ নিমজ্জিত। এ অন্ধকার সেই মাতৃ জঠর এর অন্ধকার, উষ্ণতায় মোড়া, আসন্ন প্রসবের অপেক্ষায় ধ্যান মগ্ন।
হিসেব নেই কিভাবে কখন কাটল এ অনন্ত রাত, হঠাত ই একদিন কিভাবে কার যেন বরে ভগীরথের তপস্যা সফল হলো ।ভগবান জেগে উঠলেন, নিবৃত্তি শেষে প্রবৃত্তির সময় এল আবার। তিনি এক এক করে জ্বেলে দিলেন সব বাতি গুলি নিজের হাতে, ঠিক দীপাবলী র রাত্রি র মত।  যেন  চক্ষু দান হল ব্রহ্মান্ডের।জ্বলে উঠলো এক এক করে নক্ষত্র পুঞ্জ, জন্ম নিলেন দেবতারা ; জন্ম নিল স্বর্গ - নরক, সুরাসুর ; জন্ম নিল আলোক - ভূলোক, পাপ - পুণ্য ;  প্রজ্জ্বলিত হলো জীবনের প্রবাহ। সেদিন তিনি "আমি" থেকে "আমরা" হলেন  ।
 সেই থেকে প্রতি রাত আজ ও সাজে দীপাবলী র সাজে। আকাশ ভরা সূর্য তারা যেন মনে করিয়ে দিতে চায় প্রতি মুহুর্তে জীবন এর মন্ত্র -  চরৈবেতি, চরৈবেতি।