আর দাদা কি বলব আর , আজকাল জীবন তাই ফেইসবুক হয়ে গেছে। মানে জীবনের face টাই internet দিয়ে booked আর কি। আমার অফিসঘর টা নেহাত ই বদ্ধ , একটাও জানলা নেই , দরজা দিয়েও খালি বারান্দা দেখা যায় মাত্র। তবে কুছ পরোয়া নেহি , মুক্ত বাতায়ন তো সঙ্গে সারাক্ষণ , কিসে খুলবো ?, ফোন এ নাকি ল্যাপটপ এ ? নাকি ডেস্কটপ ই সই ! তো এ হেন মুক্ত গবাক্ষ থাকতে কি দরকার আর জানলার ? বাইরে বৃষ্টি নামল তো দু মিনিটের মধ্যে জেনে গেলুম , দশ জন already স্টেটাস লিখে দিয়েছে , বাইরে গিয়ে মিলিয়ে নেওয়ার অপেক্ষা খালি। হুম , সত্যি বৃষ্টি ! সারা দিন টাই তো খালি ব্রেকিং নিউস এর ধুম। অমুকএর ঘুম পেয়েছে ক্লাস করতে গিয়ে , তো তমুক পাড়ার মোড়ে চা খাচ্ছে।মানে ইয়ে আমিও লিখি , আর অপেক্ষা করি কখন কে তাতে লাইক দেবে বা দুটো সহমর্মী কথা লিখবে !তবে কিনা আমি লিখি বলেই সকলের টা পড়তে হবে ? ব্যাপারটা নেহাত ই স্প্যামিং। নিউস ফিড জ্যাম করা খালি । তার মধ্যে আবার অতি intellectual এর দল , হয় সারাক্ষণ তত্ত্ব কথা জ্ঞান দিচ্ছে , শো অফ আর ঢাক পেটানো। আমি কত্ত বুঝি ! আর কবি দের তো পোয়া বারো , দু লাইন লিখলেই গুষ্টি সুদ্ধু সকল কে ট্যাগ করে জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে , পড়বি না মানে ? তোর বাপ পড়বে !
তো যাই হোক, যা বলছিলাম তা এসব গালমন্দ না , বলতে চেয়েছিলাম যে, এই ইন্টারনেট কিভাবে আমাগো বঙ্গ জীবনের অঙ্গ হলো। তখন আমাদের নেহাৎ ই তরুণ প্রাণ। ওই HS এর শেষের দিকে , বা তার ও আগে। তখনো সেভাবে ঘরে ঘরে computer আসেনি , কিন্তু পাড়ার মোড়ে এক খানি সাইবার কাফে খুলেছে। তাতেই গিয়ে জীবনের প্রথম email id খুলে এসেছিলাম rediffmail এ। তারপর ঢুকলাম কলেজ এ , সেই ২০০৪ সাল। বাড়ি তে একটা কম্পিউটার সহযোগে ব্রডব্যান্ড হাজির হলো কিছু দিন পর। ব্যাস , পড়াশুনো যদি বা হওয়ার ছিল , আরোই ঘুচলো। প্রোফাইল হলো অর্কুট এ। দেখে শুনে একটি প্রোফাইল পিকচার। ব্যাস , কিছু দিনেই বন্ধু সংখ্যা ২৫০ ! সেই প্রাইমারি স্কুল এর হারিয়ে যাওয়া বন্ধু থেকে মামার বাড়ি র পাড়ার ছেলে সবাই হাজির। তারমধ্যে বসন্তএর কোকিল ও ডাকতে শুরু করলো , কত জন এর যে কত পাতানো বন্ধু হলো , কত লোক propose করলো অর্কুট এ, আবার কত লোকের হার্ট break হলো হিসাব নেই। সেই থেকে চ্যাট করার অভ্যেস শুরু , এখনো চলছে , খালি জায়গা বদলে বদলে গেছে , কিম্বা পাত্র -পাত্রী। এই চ্যাট করে করেই আমাদের আর কোনো দিন টাইপ শিখতে যেতে হয়নি , ঝড়ের গতিতে লিখতে পারি। কাজ এর ফাঁকে গম্ভীর মুখে বসে অট্টহাস্য টাইপ করি। মানে , সেই যে উত্তরায়ণ এর মত অর্কুট-আয়ন শুরু হয়েছিল , তা বদলে গিয়ে facebook-আয়ন হলেও মূল ব্যাপারটা রয়েই গেছে। যাই হোক ওই ফেইসবুক এরই দৌলতে সব্বাই জেনে গেছে যে অর্কুট বন্ধ হতে চলেছে। তাই সবাই একবার করে নিজের অর্কুট প্রোফাইল এ গিয়ে দেখে নিচ্ছে। অর্কুট এ প্রেম করে বিয়ে টিয়ে করে ফেলেছে কত couple , কত জন অর্কুটে committed থেকে facebook এ সিঙ্গেল হয়ে গেল। মানে না হেজিয়ে বলার বিষয় এটাই যে , সব্বার হেব্বি পুরনো কথা মনে পড়ছে , কে কবে কাকে নিয়ে প্রথম একাউন্ট খুলেছিল , ইত্যাদি ইত্যাদি। মেলা ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ না করে সহজ সত্যি বস , অর্কুট কবেই জীবন থেকে চলে গেছে সবার , কেউ খুলেও দেখত না , তখনকার প্রেম ও কারুর টিকে নেই বিশেষ , যদি না বিয়ে হয়ে গিয়ে থাকে। তাহলে এত দুঃখু ভরা স্টেটাস দিয়ে আর ফেইসবুক টাকে ভরাবেন না দাদা please , অনেক হইসে। চেঞ্জ ইস the অনলি কনস্ট্যান্ট অফ লাইফ ! বুঝলেন ?